Saturday, February 27, 2016



চেক ডিসঅনার মোকদ্দমা সংক্রান্ত প্রাসংঙ্গিক আলোচনা

Negotiable Instruments Act, 1881 এর ১৩৮ ধারা- ব্যাংক হিসাবের অপর্যাপ্ত ফান্ড ইত্যাদির কারনে যদি চেক ডিসঅনার হয় অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি যে ব্যাংকে তাহার হিসাব (Dishonor) রয়েছে সেই ব্যাংক হিসাব নাম্বার হইতে অপর কোন ব্যক্তিকে কোন নির্দিষ্ট পরিমান টাকা প্রদানের জন্য চেক ইস্যু করেন এবং তাহার উক্ত হিসাবে রক্ষিত টাকার পরিমান যদি প্রদেয় চেকটির চেয়ে কম হয়, যার কারনে ব্যাংক কর্তৃক উক্ত চেকটি অপরিশোধিত অবস্থায় ফেরত বা ডিসঅনার হয় তবে উক্ত চেক দাতা অত্র আইনের বিধান মোতাবেক অপরাধ করিয়াছে বলিয়া বিবেচিত হইবে। এই জন্য তিনি এক বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ডে দন্ডিত অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিনগুন পরিমান অর্থ দন্ডে দন্ডিত হবেন।

এই ধারার বিধান কার্যকর হইবে তখনই, যখন-
() চেকটি ইস্যু করার তারিখ হইতে মাস সময় সীমার দধ্যে চেকটি ব্যাংকে উপস্থাপন করা হয়।
() ব্যাংক কর্তৃক চেকটি অপরিশোধিত (Dishonor) অবস্থায় ফেরত আসিয়াছে মর্মে অবগত হওয়ার পর হতে ৩০ দিনের মধ্যে চেকে উল্লেখিত টাকা পরিশোধের দাবী জানাইয়া চেক প্রদানকারীকে লিখিত নোটিশ প্রদান করেন।
          নোটিশ নিম্নরূপ ভাবে করতে হবে-
              () নোটিশ বিলিকরে বা অর্পণ করে, অথবা
          () নিয়মিত বাসস্থান কিংবা সবশেষ বাংলাদেশের যে স্থানে তিনি বসবাস করিয়াছেন সেই ঠিকানায় প্রাপ্তিস্বীকার পত্র রশিদ সহ রেজিস্ট্রার্ড ডাকযোগে নোটিশ প্রেরন করে, অথবা
              () বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নোটিশ প্রকাশ করে।
(১৩৮ ধারার অপরাধের জন্য নোটিশ জারি করা অত্যাবশ্যক। নোটিশ প্রদান না করিলে ১৩৮ ধারার অপরাধ হইবে না।)
() উক্ত চেক প্রদানকারী নোটিশটি প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেকের প্রাপক/ধরক বরাবরে উল্লেখিত পরিমান টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন।
 [অর্থাৎ- চেক প্রাদনের তারিখ হইতে মাসের মধ্যে চেকটি ব্যাংকে জমা করিতে হইবে, চেকটি প্রত্যাখ্যাত হইবার ৩০ দিনের মধ্যে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করিতে হইবে, নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে প্রাপক/ধারককে চেকে বর্ণিত টাকা পরিশোধে যদি ব্যার্থ হন।]

উক্ত ৩০ দিন অতিবাহিত হইবার পর হইতে ৩০ দিনের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করিতে হইবে।

স্থানীয় অধিক্ষেত্র- যেই ব্যাংকে চেক উপস্থাপন করা হয় সেই ব্যাংক যে আদালতের স্থানীয় অধিক্ষেত্রে অবস্থিত সেই আদালতে মামলা দায়ের করিতে হহবে।


27/02/2016


Tuesday, February 2, 2016

কোর্ট ম্যারেজ, মুসলিম, হিন্দু ও বিশেষ বিবাহ নিবন্ধনঃ

কোর্ট ম্যারেজ, মুসলিম, হিন্দু ও বিশেষ বিবাহ নিবন্ধনঃ
[অ্যাডভোকেট মোঃ শরীফুল ইসলাম শিপলু]

কোর্ট ম্যারেজঃ
কোর্ট ম্যারেজ বলতে আইনে কিছু নাই। তবে কোন নারী-পুরুষ যদি স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাসের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে হলফ নাম সম্পাদন করে সেটাই কোর্ট ম্যারেজ নামে প্রচলিত বা পরিচিত। যার কোন আইনগত ভিত্তি নাই। আইনে কোথাও এর কোন সংঙ্গা পাওয়া যায় না। এধরনের হলফ সম্পাদনের ভিত্তিতে যদি দাম্পত্ত সম্পর্কে পরবর্তীতে কোন জটিলতা সৃষ্টি হয় তবে একপক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত কোন অধিকার স্থাপন করতে পারবে না। এতে কোন স্ত্রী তার মোহরানার অধিকার আদায় করতে পারবেনা। অতএব যদি কোন নারী পুরুষ কোন আইনজীবীর কাছে কোর্টে বিবাহ করতে আসে তবে তার দায়িত্ব হবে বিধি মোতাবেক বিবাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করে দেওয়া। এতে উভয় পক্ষের আইনগত অধিকার সংরক্ষিত থাকবে।

মুসলিম বিবাহঃ
মুসলমান সমাজে আইনী বিয়ে ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদিত হয় এবং ১৯৭৫ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইনের অধীনে তা নিবন্ধিদ হয়ে। মুসলিম আইন অনুসারে বিয়ে একটি ধর্মীয় দায়িত্বই নয় এটি একটি দেওয়ানী চুক্তি। এই আইন অনুসারে একটি পূর্ণাঙ্গ বিয়ের জন্য কতিপয় শর্ত পূরণ করতে হয়।
উভয়পক্ষের ন্যুনতম বয়স, পারস্পরিক সম্মতি, দেনমোহর, সুস্থ মস্তিষ্কের প্রাপ্তবয়স্ক ২ জন সাক্ষী।
আইনী নিবন্ধনঃ
আইনী শর্তানুসারে বরের বয়স কমপক্ষে ২১ এবং কনের বয়স কমপক্ষে ১৮ হতে হবে। অতঃপর নারী ও পুরুষকে ইসলামী বিধান অনুসারে উভয়পক্ষের সাক্ষীর সামনে একজন উকিল বা কাজীর উপস্থিতিতে সম্মতি জানাতে হয় (কনের স্বেচ্ছা-সম্মতি বাধ্যতামূলক)। দুজন সুস্থ মস্তিষ্কের প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষী উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক এবং একজন পুরুষের সাক্ষ্য দুজন নারী সাক্ষ্যের সমান নয়। একজন নারীকে বিয়ে করতে হলে “দেনমোহর” দেয়া বাধ্যতামূলক। কাজী বা নিকাহ্ রেজিস্ট্রারার দ্বারা বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে হবে।


হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনঃ
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্রীয় বিয়ের দালিলিক প্রমাণ সুরক্ষার জন্য হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনের বিধিন করা হয়েছে। তবে এতে বিবাহ নিবন্ধনের বিষয়টি ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে।
হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনের পদ্ধতিঃ
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্রীয়ভাবে বিয়ের পর, বিয়ে যে স্থানে হবে, সেই এলাকার নিবন্ধকের কাছে নিবন্ধন করতে হবে। বর-কনে যৌথ স্বাক্ষর বা টিপসই দিয়ে নিবন্ধনের জন্য লিখিত আবেদন করবে। আবেদনের সঙ্গে বর-কনের পাসপোর্ট আকারের বা স্বামী-স্ত্রীর যৌথ ছবি সংযুক্ত করতে হবে। তবে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনের জন্য হিন্দু পুরুষের বয়স ২১ বছর এবং হিন্দু মেয়ের বয়স ১৮ বছর হতে হবে। অন্য কোন আইনে যাই থাকুক না কেন, ২১ বছরের কম বয়সী কোনো হিন্দু পুরুষ বা ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো হিন্দু মেয়ে বিয়ে করলে তা নিবন্ধনযোগ্য হবে না। অতএব, আবেদনের সময় বয়স প্রমান করে এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র সাথে রাখতে হবে।
নিবন্ধক কোনো আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে আবেদনকারী প্রত্যাখ্যানের ৩০ দিনের মধ্যে জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে আপিল করতে পারবেন। আপিল সম্পর্কে জেলা রেজিস্ট্রারের আদেশ চূড়াান্তবলে গণ্য হবে।
হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন ফিঃ
বিধিমালা অনুযায়ী প্রতি বিয়েতে নিবন্ধন ফি লাগবে ১০০০ টাকা। এই ফি পরিশোধ করবে বরপক্ষ। বিয়ে-সংক্রান্ত নথির হুবহু নকল পাওয়ার জন্য ১০০ টাকা ফি দিতে হবে।

বিশেষ বিবাহ নিবন্ধনঃ
বাংলাদেশে বিশেষ বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২’ অনুযায়ী। যেসব ব্যক্তি মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদি, পার্সি, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ধর্ম গ্রহণ করেননি, তাঁদের মধ্যে এ বিয়ে হতে পারে। এ ছাড়া যেসব ব্যক্তি হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ধর্ম গ্রহণ করেছেন, এ আইন দ্বারা তাঁদের জন্য বিয়ের বিকল্প একটি ধরন নির্ধারণ করা হয়েছে। আরও উল্লেখ করা প্রয়োজন, যেসব বিয়ের বৈধতা সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে, সেসব সুনির্দিষ্ট বিয়ের বৈধতা দেওয়া হয়েছে এ আইন দ্বারা।
বাংলাদেশে মুসলিম কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করলে অন্য ধর্মের কোনো ব্যক্তিকে মুসলিম আইন অনুযায়ীই বিয়ে করতে পারেন। যদি অন্য পক্ষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তবে কোনো সমস্যাই নেই, বিয়েটি ‘বৈধ বিয়ে’। আর যদি অন্য পক্ষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করেন, তবে এ ক্ষেত্রে বিয়েটি ‘অনিয়মিত’ হবে।
খ্রিষ্টন ধর্মের ক্ষেত্রেও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অন্য পক্ষ খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করলে কোনো সমস্যা নেই। তবে অন্য পক্ষ খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ না করলে খ্রিষ্টান পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিয়েটি ‘অনিয়মিত’ বিয়ে হবে।
বিশেষ বিয়ে সম্পাদনের ইচ্ছা পোষণ করলে দুই পক্ষের কোনো একজনকে অবশ্যই নিবন্ধক বরাবর লিখিত আবেদন করতে হবে।